তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় / প্রথম নায়ক

সুনীল গাভাসকার মানে কী?

বাঁচবে ভারতের হার!

ক্রিজে তিনি আছেন মানে বেঁচে আছে ভারতের আশা। আমাদের ছোটবেলায় ভারত হারতই বেশি। জিততে শিখতে শুরু করেছে সবে। জিততে গেলে হার বাঁচানো নিশ্চিত করতে হয়। সেটাই করতেন গাভাসকার। ক্রিকেট বলতে তখন শুধুই পাঁচদিনের টেস্ট। একদিনের ক্রিকেট এসে পড়েছে, বিশেষ করে তিরাশিতে ভারত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর। কিন্তু তখনও আসল ক্রিকেট অর্থাৎ টেস্ট নিয়ে কারও কোনও সংশয় জাগেনি। আর সেই পাঁচদিনের খেলায় প্রয়োজনে একাই দুদিন ব্যাট করে ম্যাচ বাঁচিয়ে দেবেন তিনি, আমাদের অন্তত কোনও সংশয় ছিল না। সে বিপক্ষে বোলারদের নাম যা-ই হোক না কেন!

হেলমেট পরেননি কখনও। খালি মাথায় খেলেছিলেন রবার্টস-হোল্ডিং-মার্শাল-গার্নার-ইমরান-সরফরাজ-হ্যাডলি-বোথাম-উইলিস-লিলি-টমসনদের বিরুদ্ধে। নিজের দেশে তো বটেই, সেই সব বোলারদের দেশে গিয়েও। শেষ বয়সে একটা অদ্ভুত-দর্শন টুপি মাথায়। নাম মুখস্ত করেছিলাম আমরা, স্কাল ক্যাপ। বড় হয়ে বুঝেছি, স্কাল অর্থাৎ মাথার খুলিকে ওই তীব্র গতিতে ধেয়ে আসা লাল বলের আঘাত থেকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু বল তাঁর স্কাল-ক্যাপই ছুঁতে পারেনি, স্কাল তো দূরের কথা। এখন হেলমেটে আঘাত পাচ্ছেন ব্যাটাররা, অহরহ। জানেন, লাগলেও বিপদের সম্ভাবনা কম, নেইই প্রায়। গাভাসকারের সময় ঠিক উল্টো। তারপরও ছোট চেহারার ব্যাটের নাগাল এড়িয়ে মাথা ছুঁতে পারত না বল। ভুল বলা হল, মাথায় আঘাতের যাবতীয় সম্ভাবনা নির্মূল করতে পারতেন দক্ষতায়। তাই ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ফাস্ট বোলাররাও — সংখ্যায় তাঁরা ৭৩!— পারেননি তাঁকে আঘাত করতে, বাউন্সারের পর বাউন্সার দিয়েও।

আর তাঁর শেষ ইনিংস তো রূপকথা। বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে পঞ্চম দিন তিনি পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় উইকেট নামক খাটালে দাঁড়িয়েছিলেন পাকিস্তানের জয় এবং ভারতের হারের মাঝে দেওয়াল হয়ে। ২৬৪ বল খেলেছিলেন, যে-উইকেটে একটাও বল খেলা যাচ্ছিল না! সেটাও নিজের জীবনের শেষ টেস্টে! তার মাস পাঁচেক পর লর্ডসে শেষ পাঁচদিনের ম্যাচে ১৮৮ রান। সেবারও ৪০৪ মিনিট ক্রিজে। আর বিপক্ষ বোলারদের নাম? মার্শাল-হ্যাডলি-রাইস-এমবুরি! ফর্মের শীর্ষে থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর এমন ঘটনাও তো বিরল।

সাত বা তের রানে গাভাসকার আউট হলে কমেন্টেটররা বলতেন, ইন্ডিয়া সেভেন (বা থারটিন) ফর গাভাসকার। না, এমন কাউকে আমরা কখনও দেখিনি। দেখবও না। তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে তাই আলাদা করে আবারও ধন্যবাদ ও প্রণাম। ক্রিকেটকে ভালবাসতে শেখানোর প্রথম নায়ক যে তিনিই!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *