আশঙ্কার চোরাস্রোতেই ডুবল ভারত
সৌরভ রায়, বার্মিংহ্যাম
আশঙ্কা। ছোট্ট শব্দ। তাও বড্ড ভারী। মনের মধ্যে উথাল পাথাল করে দেয়।
এজবাস্টনেই দেখুন না। ঝকঝকে রোদ্দুরের মধ্যেও চোরা আশঙ্কার স্রোত বইছিল। প্রতিদিন সারিবদ্ধভাবে স্টেডিয়ামের দিকে যাওয়া জনস্রোতের মনে। আশঙ্কা ছিল বৃষ্টি আসবেই। এসেছিল। কী অদ্ভুত মিল ভারতীয় দলের সঙ্গে। তাই প্রথম ইনিংসে ভারতের ৪১৬ রান। ঋষভ পন্থের ধুন্ধুমার শতরান। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস ধসে যাওয়া। সব যখন সোনালি রোদ্দুরের আভা দেখাচ্ছিল, মনের কোণে আশঙ্কার কালো মেঘ তবু ছিলই। সেই মেঘ ডানা মেলল সময়ের সঙ্গে। ভারতকে জেতা ম্যাচ হারতে দেখল এজবাস্টন। দর্শক আসনে থাকা ভারতীয়দের প্রথম দিকের জয়োল্লাস শেষের দিকে বদলে গেল শুধুই হতাশায়।

পন্থ, জাডেজার জোড়া শতরান ভারতের প্রথম ইনিংসে। রান ৪১৬। বদলে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে গিয়েছিল ২৮৪-তে। মহম্মদ সিরাজের চার উইকেট। অধিনায়ক বুমরার তিন। কপিল দেবের পর প্রথম ভারতীয় জোরে বোলার হিসেবে অধিনায়কত্ব করতে নেমেছিলেন বুমরা। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ ২৪৫-এ। কিছুটা লড়লেন চেতেশ্বর পুজারা এবং ঋষভ পন্থ।
ম্যাচে ইংল্যান্ড যখন চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করতে নামছে, সামনে বেশ বড় রানের টার্গেট — ৩৭৮। ইতিহাস বলছে এত বড় রানের টার্গেট নিয়ে ইংল্যান্ড কখনও ম্যাচ জেতেনি। তবে খেলাটা তো ক্রিকেট। আর উল্টো দিকের দলটার নাম ইংল্যান্ড। নজির ভাঙাগড়া তো চলতেই থাকে। আশঙ্কার কালো মেঘ ডানা মেলতে শুরু করেছিল ইংল্যান্ডের চতুর্থ ইনিংসের শুরু থেকেই। যেন ঘরের মাঠে ম্যাচ জেতার হার না মানা জেদ। অ্যালেক্স লিস এবং জ্যাক ক্রলির ওপেনিং জুটিতে উঠল ১০৭। তারপর তিন উইকেট হারাল ইংল্যান্ড দ্রুত। এজবাস্টনের গ্যালারির মত প্রেস বক্সে ভারতীয় সাংবাদিকদের মনেও তখন আবার উজ্জ্বল আশার আলো। তবে আশঙ্কাটা কখনও যায়নি। শেষ দিনে বাঁচাতে পারত হয় বৃষ্টি নয় ভারতীয় বোলাররা। তবে ইংল্যান্ডের জো রুট এবং বেয়ারস্টো যেন ভারতীয় বোলারদের আক্রমণের মতোই থমকে দিয়েছিলেন বৃষ্টি বয়ে নিয়ে চলা মেঘকেও। তাই বৃষ্টি নামেনি। আর উইকেট থেকেও সরানো যায়নি এই দুজনকে। দুজনেই শতরান করে হাসতে হাসতে ম্যাচ বের করলেন। নতুন নজির তৈরি করে। আর চাপ ফিরিয়ে দেওয়ার পাল্টা কৌশলে বাজিমাত করে ইংল্যান্ডের রকস্টার রুট বলছিলেন, ‘না না আমি নই। আমাদের অধিনায়ক বেন স্টোকস আসল রকস্টার।’
রুট বোঝালেন তিনি বিনয়ী। উইকেটে শিকড় হয়ে হারা ম্যাচ বের করলেন। বুঝিয়ে গেলেন, ভারতীয় টেস্ট বোলিং আক্রমণে এখনও অনেক ফাটল!